🔸রাজকীয় পরমাধিকার :

➡️ইংল্যান্ডের গণতন্ত্র ও দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার,শাসনকার্যের প্রকৃত ক্ষমতা মন্ত্রিপরিষদ ও পার্লামেন্টের উপর ন্যস্ত।

➡️কিন্তু দেশের সাধারণ আইন (Common law) প্রচলিত রীতিনীতি (Conventions) এবং সাংবিধানিক আইন মােতাবেক ইংল্যান্ডের রাজা বা রাণী কতিপয় বিশেষ ক্ষমতা ও সুযােগ-সুবিধা ভােগ করে থাকেন, যার ফলে দেশের অন্যান্য নাগরিকদের উপর তার প্রাধান্য বজায় থাকে। এই বিশেষ ক্ষমতা ও সুযােগ-সুবিধাকেই রাজকীয় পরমাধিকার (Royal Prerogative) বলা হয়।

➡️ রাজকীয় পরমাধিকারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আইনবিদ ব্ল্যাকন্টোন বলেন যে, এ অধিকার বলে ব্রিটেনের রাজা বা রাণী রাজকীয় মর্যাদার অনুকূলে কনভেনশন অনুযায়ী ও স্বাভাবিক নিয়মে রাজ্যের সকল নাগরিকের উপর প্রাধান্য লাভ করে থাকেন।

🟣আইনবিদ কোকের মতে, ব্রিটেনের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ইংল্যান্ডের রাজা বা রাণীকে যে সকল ক্ষমতা, সুযােগ-সুবিধা ও প্রাধান্য দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে রাজা বা রাণীর রাজকীয় পরমাধিকার।

➡️যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট কর্তৃক রাজকীয় পরমাধিকার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা :

🔹রাজার বিশেষ অধিকারকে হ্রাস করা অথবা সম্পূর্ণরূপে বিলােপ করার অধিকার পার্লামেন্টের রয়েছে। জনগণের স্বার্থে পার্লামেন্ট যে কোনাে আইন প্রণয়ন করতে পারেন এবং রাজকীয় পরমাধিকার প্রয়ােগসহ সাংবিধানিক বিধিসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পার্লামেন্টের অধিবেশন আহবান করা যায়। এভাবে পার্লামেন্ট কর্তৃক রাজকীয় পরমাধিকার প্রয়ােগ নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

➡️বস্তুত ইংল্যান্ডে রাজার পরমাধিকার প্রয়ােগের ক্ষেত্রে তাঁর অবাধ স্বাধীনতা নাই।বিভিন্নভাবে ইহা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে, তবে জনগণের স্বার্থের অনুকূলে এর প্রয়ােগকে সকল সময় প্রাধান্য দেয়া হয়।

🔴ব্রিটিশ সরকার ব্যবস্থা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সরকার ব্যবস্থা হতে স্বতন্ত্র। গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে পরিচিত থাকলেও ব্রিটেনে একই সাথে গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র এবং অভিজাততন্ত্রের এক অভিনব সংমিশ্রণ লক্ষ করা যায়।

🔴ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র এক অতি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। নবম শতাব্দীতে এলবার্টের (King
Elbert) সময় হতে প্রায় অবিচ্ছিন্নভাবেই এটা চলে আসছে। গণতন্ত্রের বিপ্লব অনেক দেশের রাজতন্ত্রকে বিলুপ্ত করেছে, কিন্তু ব্রিটেনে ইহা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয় নি, বরং কিছুটা পরিবর্তিত আকারে জনগণের অনুমােদনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

🔴বর্তমানে রাজশক্তি যে ক্ষমতা ভােগ করেন তা প্রায় সবই পার্লামেন্ট কর্তৃক আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় একজন নিয়মতান্ত্রিক প্রধানের প্রয়ােজন। বহুকাল যাবৎ রাজতন্ত্র প্রচলিত থাকায় এর প্রভাব জনগণের মধ্যে এমনভাবে গ্রথিত হয়েছে যে, রাজতন্ত্রের
উচ্ছেদ জনগণ কামনা করেনি, বরং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজা বা রাণীর ক্ষমতা ও কার্যধারা।
নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হিসেবে জনগণ গ্রহণ করেছে। দেশে গােলযােগ, বিপ্লব বা সরকারের পতন।

➡️পরিবর্তনের পক্ষে জনগণ কাজ করেছে। তাই সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হলে রাজা বা রাণীকেই।
হলে রাজা বা রাণীই হতেন জনগণের ত্রাণকর্তা, এরূপ ভরসা ইংরেজ জাতি করে থাকেন রাখার পক্ষপাতী।

🔹 গণতান্ত্রিক দেশসমূহে সাংবিধানিক প্রধান যে ক্ষমতা ও অধিকার ভােগ এবং।তাঁরা মনে করে যে, বাকিংহাম প্রাসাদে, রাজা বা রাণী আছেন বলেই জনগণ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে। সেখানে রাজনৈতিক দল যথা, শ্রমিক দল ও রক্ষণশীল দল উভয়েই রাজতন্ত্র টিকিয়ে।

🔸কর্তব্য পালন করেন, ব্রিটেনের রাজা বা রাণী সেগুলি করে থাকেন। কাজেই রাজতন্ত্র সেখানে।
গণতন্ত্রের অন্তরায় না হয়ে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ কমন্সসভা প্রকৃতপক্ষে সকল ক্ষমতা ভােগ করে। (Almost all theauthority of Parliament is in the House of Commons”–Finer) 1 G51777।

➡️ভােটে এর সদস্য নির্বাচিত হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দল মন্ত্রিসভা গঠন করেন। মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকেন। তিনিই মূলত সরকার ব্যবস্থার প্রধান নির্বাহী। অন্যান্য।মন্ত্রিগণ তার অধীনেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সংসদে কোনাে মন্ত্রিসভা।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে তখন সে সরকারের পতন ঘটে। গণতন্ত্রের এই স্বাভাবিক নিয়মে ব্রিটেনে সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত।

⭕কাজেই প্রকৃত অর্থে কমন্সসভা গণতন্ত্র এবং রাজা বা রাণী রাজতন্ত্রের প্রতীক। কমন্সসভাই রাজতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু রাজতন্ত্র কমন্সসভার কার্যাবলিকে সকল সময়
অনুমােদন করে।

⭕কমন্সসভা সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান এবং এর সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়লে অতীতের ন্যায় রাজতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে। তাই দেশের স্বার্থে উভয় প্রতিষ্ঠান পারস্পরিক সহায়ক হিসেবে কাজ করে; সাংঘর্ষিক হলে দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে।

⭕যুক্তরাজ্যে আইন প্রণয়নে লর্ড সভার ভূমিকা
লর্ড সভার উল্লেখযােগ্য কার্যাবলি হচ্ছে আইন প্রণয়ন, বিচারকার্য এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ে আলােচনা ও বিতর্ক অনুশীলন করা।

⚪ কমন্সসভায় কোনাে বিল পাস হবার পর রাজা বা রাণীর সম্মতির পূর্বে তা লর্ডসভায় পেশ করা হয়। পূর্বে কমন্সসভা ও লর্ডসভার ক্ষমতা সমান।ছিল। কিন্তু ১৯১১ সালের পার্লামেন্টারী আইন লর্ডসভার ক্ষমতা সঙ্কুচিত করেছে। পরে ১৯৪৯।সালের আইন এই ক্ষমতা আরাে সঙ্কুচিত করেছে। এই আইনগুলি পাসের পর কমন্সসভা কর্তৃক।গৃহীত বিল লর্ডসভার অনুমােদন ব্যতীত রাজার সম্মতির জন্য প্রেরিত হয়ে থাকে।

🟣বর্তমানে।লর্ডসভার কোনাে বিল আইনে পরিণত হতে অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে না। তবে এগুলি নিয়ে।পর্যালােচনা করতে পারে এবং এক বছর পর্যন্ত আটকিয়ে রাখতে পারে। অর্থ সংক্রান্ত বিল।এখন আর লর্ডসভায় উত্থাপিত হয় না এবং এটা পাস হবার জন্য লর্ডসভার সম্মতির প্রয়ােজন।হয় না। অন্যান্য সরকারি বিল উত্থাপন করা হয় লর্ডসভায় পর্যালােচনার জন্য কমন্সসভায়।একটি বিলের যাত্রা শুরু হয় এবং কয়েক সপ্তাহ অধিবেশনে এই বিলের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর।সভার কার্য শুরু হয়।

⭕ বে-সরকারি বিলের ব্যাপারে লর্ডসভার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।কমন্সসভা ছাড়া এই সভায় তার বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে থাকে। এভাবে কমন্সসভার কিছু সময় বাঁচে। তাই অনেকে মন্তব্য করেছেন যে বর্তমানে লর্ডসভা একটি পর্যালােচনাকারী ও বিলম্বকারী কক্ষে পরিণত হয়েছে।

⭕লর্ডসভার আর একটি উল্লেখযােগ্য কাজ হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিতর্কের ব্যবস্থা করা। যেহেতু লর্ডসভায় দেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ ব্যক্তির সমাবেশ ঘটে সেহেতু এই সভায় আলােচনা বেশ উঁচু মানের হয়ে থাকে। সদস্যরা নির্দ্বিধায় মনের কথা বলতে পারেন।

➡️কমন্সসভা যখন প্রধানমন্ত্রী, বিচারপতি ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের কোনাে
অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেন তখন লর্ডসভা সেই অভিযােগগুলি পর্যালােচনা করেন এবং মতামত ব্যক্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *