🔴 মুসলিম বিবাহ দেওয়ানি চুক্তি ও পবিত্র বন্ধনের সময় :

🔹মুসলিম আইন অনুযায়ী বিবাহ হচ্ছে একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তি যদ্বারা উভয়ের মধ্যে সম্ভোগ ও সন্তান লাভ চিরস্থায়ীভাবে বৈধকরণ করা হয়।

⭕সংজ্ঞার আনুষ্ঠানিকতায় যদিও বিবাহকে একটি বিধানিক চুক্তি বলা হয়, তবুও প্রকৃতপক্ষে ইহা নিছক একটি চুক্তি নয়।

🔸কারণ, যে কোনাে চুক্তি সাময়িককালের জন্য হতে পারে, কিন্তু বিবাহের চুক্তি যাবজ্জীবনের জন্য। এছাড়া প্রত্যেক চুক্তিতে পূর্বাহ্নেই প্রতিদান স্থির করা হয়। কিন্তু বিবাহের দেনমােহর যাকে এই চুক্তির প্রতিদান বলা হয় তা বিবাহের সময় স্থিরিকৃত না হলেও তা অসিদ্ধ হয় না।

🔸 পরবর্তীকালেও তা স্থির করা যায়। এমনকি দেনমােহর প্রদান করা হবে না বলে স্থির
করা হলেও বৈধ বিবাহে কোনাে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না।

⭕আবার হিন্দু বা খ্রিস্টান বিবাহের মতাে এটা একটা ধমীয় সংস্কারও নয়। ধর্মীয় বিধানাবলির অন্তর্ভুক্ত না হলেও বিবাহকে ইবাদতের শামিল বলে গণ্য করা হয়। যাতে মানুষ অপবিত্রতা ও ব্যভিচার হতে নিজেদেরকে রক্ষা করতে সমর্থ হয় তজ্জনই বিবাহ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এতে শুধু ধর্মীয় তাৎপর্যই নয়, সামাজিক তাৎপর্যও রয়েছে।

➡️তাই বলা যায় যে, মুসলিম বিবাহ

🔹 শুধুমাত্র বিধানিক চুক্তি নয়, একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পবিত্র বন্ধনও বটে। অন্যান্য
বিবাহ যাকে ধর্মীয় অনুষ্ঠান বলা হয় তার সাথে এটার পার্থক্য হচ্ছে এই যে, মুসলিম বিবাহ ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙ্গে দেয়া যায় কিংবা স্বামীর মৃত্যুর পর তা ভেঙ্গে যায়।

🔹এর মধ্যে কর্তব্যবোেধ রয়েছে।

🔹যদিও সম্ভোগ ও সন্তান উৎপাদনই বিবাহের প্রাথমিক উদ্দেশ্য বলা হয়, ইহা জীবনে
শান্তি ও স্বস্তি বিধানে সহায়ক বলে গণ্য করা হয়।

🔹 ইহা কোনাে শর্ত সাপেক্ষ হয় না সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকরী হয়।

➡️বৈধ বিবাহের শর্ত : মুসলিম আইন অনুসারে বিয়ে একটি দেওয়ানি চুক্তি যার ফলে। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাসের এবং তাদের সন্তানসমূহের বৈধ স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। মুসলিম।

🔸আইনে বৈধ বিয়ের উপাদানগুলি নিম্নরূপ :

🔹ইজাব বা প্রস্তাব : বিয়ের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পেশ করতে হবে। সাধারণত বরের পক্ষ হতে কনের নিকট বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়।

🔹কবুল বা স্বীকৃতি : বিয়ের এরূপ প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করতে হবে। প্রস্তাব ও স্বীকৃতি একই বৈঠকে হওয়া আবশ্যক।

🔹 সাক্ষী : দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলার
এ সম্মুখে এরূপ প্রস্তাব ও স্বীকৃতি সম্পন্ন হতে হবে।

🔹সাবালকত্ব : বর ও কনে উভয়কেই সাবালক হতে হবে। শরিয়া আইন মােতাবেক ১৫ বছর পূর্ণ হলে সাবালক ধরা হতাে। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরােধ আইন অনুযায়ী পুরুষের ক্ষেত্রে ২১ বছর এবং স্ত্রীলােকের ক্ষেত্রে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া আবশ্যক।

🔹 সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন : বর ও কনে উভয়কে সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হতে হবে। শরিয়া আইন অনুসারে একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও পাগল ব্যক্তির বিয়ে অভিভাবকদের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত বিধিবদ্ধ আইন (মুসলিম পারিবারিক আইন) অনুযায়ী অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

🔹 নিষিদ্ধ সম্পর্ক পরিহার : কোনাে পুরুষ কিংবা স্ত্রীলােক তার নিষিদ্ধ সম্পর্কের কোনাে আত্মীয়কে বিয়ে করতে পারবে না।

🔹নিম্নবর্ণিতআত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে :

🔸কোনাে পুরুষ তার মাতা, মাতার মাতা, পিতার মাতা এবং এরূপ উর্ধগামী সকল স্ত্রীলােককে বিয়ে করতে পারবে না

🔹কোনাে পুরুষ তার কন্যাকে, কন্যার কন্যাকে এবং এরূপ নিম্নগামী সকল স্ত্রীলােককে বিয়ে করতে পারে না।

🔹 সহােদরা, বৈমাত্রেয়, বৈপিত্রেয় ভগ্নিকে কিংবা তাদের কন্যাকে কিংবা এরূপ কন্যার কন্যা এভাবে নিম্নগামী সকলকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ।

🔹 ভ্রাতুস্পুত্রী, ভাগ্নী কিংবা তাদের কন্যা এবং এরূপ নিম্নগামী সকলকে বিয়ে করা যায়।

🔸 মাতৃকুল বা পিতৃকুল সম্পর্কের কারণে, চাচী, ফুপু, খালা, মামী, পিতা-মাতার চাচী, ফুফু, খালা মামীকে বিয়ে করা যায় না। এগুলি ছাড়াও জ্ঞাতিত্বের কারণে ও ধাত্রীত্বের কারণে কিছু কিছু বিয়ে সম্পর্ক নিষিদ্ধ করা
হয়েছে।

🔹 মােহরানা : বর কর্তৃক কনেকে প্রদেয় মােহরানা বৈধ বিয়ের অন্যতম শর্ত। মােহরানা হচ্ছে অর্থ বা অন্য কোনাে সম্পত্তি যা স্ত্রী স্বামীর নিকট হতে বিয়ের মূল্যস্বরূপ পাবার অধিকারী।

🔹 রেজিস্ট্রেশন : ১৮৮০ সালের কাজি আইন বর্তমানে যা মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রেশন । আইন, ১৯৭৪ নামে আখ্যায়িত এবং ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুযায়ী বিয়ের কাবিন নামা বা চুক্তিপত্র কাজি বা নিকাহ রেজিস্ট্রার কর্তৃক রেজিস্ট্রি করতে হবে।

🔸 ইহা যদিও বাধ্যতামূলক তবুও এর অবর্তমান বিয়ে অবৈধ হবে না।এ সকল উপাদানগুলির মধ্যে ইজাব, কবুল ও মােহরানা অপরিহার্য এবং অন্যান্যগুলি।
সম্পূরক।

🔸বাতিল ও অনিয়মিত (ফাসিদ) বিয়ের মধ্যে নিমােক্ত পার্থক্য :

➡️প্রথমত, বাতিল বিয়ে আইনের দৃষ্টিতে কোনাে বিয়েই নয় এবং এর ক্রটিসমূহ স্থায়ী।

🔹যেমন, রক্ত সম্পর্কিত ও দুগ্ধ সম্পর্কিত বাধা-নিষেধ উপেক্ষা করে বিয়ে করলে মুসলিম আইনে তা বাতিল বিয়ে হিসেবে গণ্য হবে।

🔹পক্ষান্তরে, যে সকল বিয়ে সম্পূর্ণরূপে বৈধও নয় কিংবা বাতিলও নয় সেগুলি অনিয়মিত বিয়ে। এগুলির ক্রটি সাময়িক ও সংশােধনযােগ্য। যেমন, ৪ জন স্ত্রী বর্তমান থাকা সত্ত্বেও ৫ম বার বিয়ে করলে তা অনিয়মিত বিয়ে হবে। কিন্তু যে কোনাে ১টি তালাক দিলে আবার তা বৈধ
হয়ে যাবে।

🔹দ্বিতীয়ত, বাতিল বিয়ে কোনাে প্রকার অধিকার ও দায় দৃষ্টি করে না। পক্ষান্তরে,অনিয়মিত বিয়েতে তা সৃষ্টি করে।

🔹তৃতীয়ত, বাতিল বিয়ের ক্ষেত্রে আরােপিত বিধি-নিষেধ স্থায়ী ধরনের কিন্তু অনিয়মিত বিয়ের ক্ষেত্রে এগুলি সাময়িক ও অস্থায়ী ধরনের।

🔸চতুর্থত, বাতিল বিয়ের ত্রুটি সংশােধনযােগ্য নয় বিধায় তা কখনাে বৈধ করা যায় না।

➡️অপর পক্ষে, অনিয়মিত বিয়ের ত্রুটি সংশােধনযােগ্য বিধায় এগুলি দূর করলে বিয়ে বৈধ হয়ে যায়।

🔸পঞ্চমত, বাতিল বিয়ের সন্তান-সন্ততি বৈধ নয় এবং তারা উত্তরাধিকারসহ কোনাে প্রকার আইনগত অধিকারের দাবিদার নয়।

পক্ষান্তরে, অনিয়মিত বিয়ের সন্তানাদি বৈধ এবং উত্তরাধিকারসহ সকল প্রকার আইনগত
মন অধিকার পেতে হকদার।

🔸ষষ্ঠত, অনিয়মিত বিয়ে একমাত্র সুন্নী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত আছে, শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে নাই। সেজন্য বাতিল ও অনিয়মিত বিয়ের মধ্যে পার্থক্য শুধু সুন্নী আইনেই বিদ্যমান শিয়া আইনে নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *