➡️পিতৃত্ব নির্ধারণ :
🔹পিতা ও সন্তানের মধ্যকার বৈধ সম্পর্ক হলাে পিতৃত্ব এবং মা ও সন্তানের মধ্যকার বৈধ সম্পর্ক হলাে মাতৃত্ব। কোনাে সন্তানের পিতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তার পিতা-মাতার মধ্যে অবশ্যই বিয়ে হয়েছে তা দেখাতে হবে। এই বিয়ে অবশ্যই সহি (বৈধ) বা
ফাসিদ (অনিয়মিত) হতে হবে, কিন্তু বাতিল (অবৈধ) হলে চলবে না। প্রত্যক্ষ প্রমাণ দ্বারা এই
বিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। প্রত্যক্ষ প্রমাণের অভাবে পরােক্ষ প্রমাণও গ্রহণযােগ্য।
⭕ অন্যান্য অবস্থাসহ দীর্ঘকাল সহবাস হতে অথবা জন্মগ্রহণকারী সন্তানকে স্বীকৃতিদানের মাধ্যমে বিয়ের অস্তিত্ব প্রমাণিত হতে পারে। দীর্ঘদিন যাবৎ স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস কেবল বিয়ের.অনুমানের সৃষ্টি করে মাত্র। তাই যে ক্ষেত্রে বিয়ে প্রমাণিত হয় নাই বা অপ্রমাণিত হয়েছে সেক্ষেত্রে শুধু স্বীকৃতি দ্বারা সন্তানকে বৈধ করা যায় না। তাই পিতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মূল বিষয় হচ্ছে সে ব্যক্তির মাতা ও কথিত পিতার মধ্যে বিয়ে।
⭕হাবিবুর রহমান বনাম আলতাফ আলীর প্রখ্যাত মামলায় প্রিভি কাউন্সিল বলেন যে, বৈধ সন্তান হতে হলে তাকে কোনাে ব্যক্তি এবং তার স্ত্রীর সন্তান হতে হবে। আর স্ত্রী শব্দটি বিয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
➡️পিতৃত্ব নির্ধারণের প্রয়ােজনীয়তা :
🔹মুসলিম আইনে বৈধতার প্রশ্নটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বৈধ সন্তান পিতার নিকট হতে ভরণপােষণ ও উত্তরাধিকারী পাবার অধিকারী। যেক্ষেত্রে কোনাে শিশুর পিতৃত্ব তার গর্ভস্থ হওয়া বা ভূমিষ্ঠ হবার সময় তার পিতা-মাতার মধ্যে বিয়ের অস্তিত্ব সাব্যস্ত করা যায় না, সেক্ষেত্রে উক্ত বিয়ে ও জন্ম সাব্যস্ত করার জন্য স্বীকৃতি একটা গ্রহণযােগ্য স্বীকৃত পদ্ধতি। মাতৃত্ব নিয়ে কোনাে সমস্যা হয় না কেননা এটা সহজে বােঝা যায়। কিন্তু পিতৃত্ব উদঘাটন করা সহজসাধ্য নয়। কোনাে ব্যক্তি যদি এক বিশেষ সন্তানকে তার ঔরসজাত বৈধ সন্তান বলে স্বীকার করে নেয় তবে স্বীকৃতির মাধ্যমে উক্ত সন্তানকে ঐ ব্যক্তির বৈধ সন্তান বলে ধরে নেয়া যায়।
🔸কাজেই দেখা যায় যে, পিতৃত্ব নির্ধারণের বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এর উপর
আইনগত অধিকার নির্ভরশীল।
➡️বৈধ স্বীকৃতির শর্তাবলি :
🔸 কোনাে স্বীকৃতি বৈধ ও কার্যকর হতে হলে নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ করতে হবে—
তাদেরকে পিতা-পুত্র ধরে নেয়া যায় চলবে না।
🔹বয়সের যথেষ্ট পার্থক্য থাকতে হবে যেন
🔹স্বীকৃতপ্রাপ্ত ব্যক্তির মাতা ঐ ব্যক্তির জন্মের সময় অপর কোনাে ব্যক্তির স্ত্রী থাকা
🔹বৈধ সন্তানকেই অর্থাৎ বৈধ বিয়ের ফলে যার জন্ম হয়েছে স্বীকৃতির দ্বারা একমাত্র তাকেই বৈধ সন্তানরূপে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। তাই ব্যভিচার বা নিষিদ্ধ সম্পর্ক লম্বন করে অবৈধ বিয়ের ফলে যে সন্তানের জন্ম অবৈধ হয়েছে তাকে স্বীকৃতির
দ্বারা বৈধ সন্তানরূপে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না।
🔹স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বীকৃতিদাতা ছাড়া অন্য কারাে সন্তান হিসেবে পরিচিত থাকলে চলবে না।
🔹 স্বীকৃতিদাতা কখনাে স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান বা পরিত্যাগ করতে পারবে না।
🔹স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি কখনাে স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না।
🔹 বিবাহের বৈধতা অপ্রমাণিত হলে স্বীকৃতির দ্বারা বিবাহকে বৈধ করা যায় না।
🔹 বৈধতার স্বীকৃতি প্রকাশ্য হতে হবে।
🔹 শুধু পুত্র হিসেবে নয় বৈধ পুত্র হিসাবে স্বীকৃতি দান আবশ্যক।
➡️হাবিবুর রহমান বনাম আলতাফ আলী মামলা
পিতৃত্বের প্রশ্নে ১৯২১ সালে অনুষ্ঠিত হাবিবুর রহমান বনাম আলতাফ আলী (৪১ আই, এ ১১৪) মামলার সিদ্ধান্তটি বিশেষ প্রণিধানযােগ্য। যেক্ষেত্রে কোনাে শিশুর পিতৃত্ব অর্থাৎ তার গর্ভস্থ হওয়া বা ভূমিষ্ঠ হবার সময় তার পিতামাতার মধ্যে বিয়ের অস্তিত্ব প্রমাণের মাধ্যমে সাব্যস্ত করা যায় না সেক্ষেত্রে উত্তরাধিকার নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে অনুরূপ বিয়ে ও বৈধ জন্ম সাব্যস্ত করার পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি মুসলিম আইনে একটি বাস্তব আইন। স্বীকৃতির এই নীতিটি হাবিবুর রহমান বনাম আলতাফ আলী মামলার সিদ্ধান্ত অনুসারে কেবল সেক্ষেত্রে প্রযােজ্য যেখানে কার্যত বিয়ের বর্ণনা বা সঠিক সময় অনিশ্চিত অর্থাৎ প্রমাণিত নয় বা মিথ্যা প্রমাণিত নয় অন্য কথায় এই নীতির প্রয়োেগ শুধু মাত্র জন্মগত বৈধতার অনিশ্চয়তার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ এবং তা জন্মের বৈধতা সম্পর্কে অনুমানের ভিত্তিতে প্রযােজ্য।
➡️হাবিবুর রহমান বনাম আলতাফ আলী সিদ্ধান্তটি বৈধ স্বীকৃতির জন্য কতিপয় শর্তাবলির সংযােজন করেছে।
🔸এগুলি হচ্ছে :
🔹পক্ষদ্বয়ের বয়সের পার্থক্য এমন হতে হবে যেন স্বীকৃতিদাতাকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যক্তির পিতা হিসেবে ধরে নেয়া যায়।
🔸শুধু পুত্রত্বের স্বীকৃতি হলে চলবে না বরং স্বীকৃতি স্পষ্টভাবে সৃষ্টি করতে হবে যাতে প্রমাণ হয় যে, স্বীকৃতিদাতা অন্য একজনকে শুধু তার পুত্র হিসেবেই গ্রহণ করেন
নি। বরং বৈধ পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে।
🔸 স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান বা পরিত্যাগ করতে পারে না। এভাবে হাবিবুর রহমান বনাম আলতাফ আলী মামলাটি পিতৃত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী নীতি প্রতিষ্ঠিত করেছে।