⚫উৎপাতঃ মানুষের নিজের শরীর, সম্পত্তি, সুনাম, দখল ইত্যাদির উপর যেমন আইনগত অধিকার স্বীকৃত হয়েছে, তেমনি জমির ভােগ-দখল ও স্বাচ্ছন্দ্যের অধিকারও স্বীকৃত
আছে। এই স্বাচ্ছন্দ্য ও ভােগের দখলে কেউ অহেতুক হস্তক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে নুইস্যান্স
বা উৎপাতের মামলা করা যায়।

🟣ফরাসি শব্দ nuire ‘হতে nuisance উদ্ভূত, যার অর্থ আঘাত করা বা বিরক্ত করা। জমির ভােগে বা ব্যবহারে বা প্রাসঙ্গিক কোন অধিকারে বেআইনি হস্তক্ষেপকে উইনফিল্ড উৎপাত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু স্ট্রিট বলেন যে, আদালত উৎপাতকে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করেছেন।

🔵প্রথমত,কোন আচরণ বা অবস্থার বর্ণনা যা বিরক্তির সৃষ্টি করে যেমন বাড়ির পাশে।
ইটের ভাটা করা।

⭕দ্বিতীয়, এমন আচরণ যা ক্ষতির কারণ ঘটায়। যেমন, প্রতিবেশীর উচ্চ শব্দে কোন উৎপাতের শ্রেণিবিভাগ : উৎপাত দুই প্রকার।

🔴 যথা (১) ব্যক্তিগত উৎপাত; এবং (২) সৰ্ব।
সাধারণের উৎপাত।

⭕তৃতীয়, আইনগত দায়-দায়িত্ব, যেমন, প্রতিবেশীর কোনাে বিষাক্ত, ধােয়ার ফলে গাছপালা।

➡️বিনষ্ট হলে আদালত উৎপাতের জন্য দায়ী করে থাকেন। যাহােক, পানি, বিদ্যুৎ ধোয়া, দুর্গন্ধ,
আগুন গ্রাস, হট্টগােল, তাপ, সংক্রামক ব্যাধি, ইত্যাদির দ্বার উৎপাত সৃষ্টি করা যায় ।

🔸 ব্যক্তিগত উৎপাত : যে উৎপাত কোনাে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ক্ষতিসাধন।
করে কিন্তু সর্বসাধারণের সমাজের সামগ্রিক ক্ষতি করে না, তাকে ব্যক্তিগত উৎপাত বলে।

🔸 সর্বসাধারণের উৎপাত : যে উৎপাতের দ্বারা জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত করা
হয় বা অসুবিধার সৃষ্টি করা হয় তাকে সর্বসাধারণের উৎপাত বলে।

🔹কে উৎপাতের মামলা করতে পারে?

🔸উৎপাতের দ্বারা যিনি বা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা মামলা করতে পারেন সর্বসাধারণের।

▪️উৎপাতের ক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধির বিধানমতে এটর্নি জেনারেলের অনুমতি নিয়ে মামলা দায়ের। করতে হয়। কোন উৎপাত সর্বসাধারণের উৎপাত হলেও কোনাে ব্যক্তিকে যদি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাহলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে মমালা দায়ের করতে পারেন। (AIR 1939 Allahabad 655) ।

⚫ উৎপাতের বিরুদ্ধে প্রতিকার : উৎপাতের বিরুদ্ধে তিন ধরনের প্রতিকার চাওয়া ও পাওয়া
যায়। যথা- অপসারণ, ক্ষতিপূরণ ও স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা। আদেশাত্মক নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনায়
মােকদ্দমা দায়ের করে উহা অপসারণের প্রার্থনা করা যায়।

➡️ব্যক্তিগত উৎপাতের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ প্রার্থনা করে মােকদ্দমা দায়ের করা যায়। ব্যক্তিগত ও গণউৎপাত উভয় ক্ষেত্রে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার ডিক্রি জারি করে চিরতের উহা বন্ধ করা যায়।
ব্যক্তিগত উৎপাতের ক্ষেত্রে বিদ্বেষ প্রাসঙ্গিক কিনা :

🔹কোনাে একটি বিশেষ কাজ উৎপাতের পর্যায়ে পড়ে কিনা তা নির্ভর করে সে কাজের পরিস্থিতি, সময়, স্থান, পদ্ধতি, ফলাফল, সংবেদনশীলতা, ইত্যাদির উপর। শান্তিপূর্ণ উপায়ে যে কাজ করলে উৎপাত হয় না, সে কাজই আবার হঠকারিতার সাথে কিংবা বিদ্বেষমূলকভাবে সম্পাদন করলে উৎপাতের পর্যায়ে পড়ে। ক্রিস্টি বনাম ডেভি Christie v. Davey, (1893) |

🔹CH316 মামলায় জানা যায় বাদী ও বিবাদী পাশাপাশি দুই ঘরে বসবাস করতেন। বাদী
একজন সঙ্গীতের শিক্ষক ছিলেন। সঙ্গীত অনুশীলনের জন্য বিবাদী খুব বিরক্ত হতেন।
তাই তিনি বিরক্ত হয়ে উচ্চস্বরে শব্দ করে, দেয়ালে আঘাত করে ও নানাভাবে চিঙ্কার করে বাদীর
সঙ্গীত অনুশীলনে বাধা দিতেন। আদালত অভিমত প্রকাশ করেন যে, কাজটি স্বাভাবিক ও
যুক্তিযুক্তভাবে সম্পন্ন করলে উৎপাত হতাে না। কিন্তু বিদ্বেষমূলকভাবে সম্পন্ন করায় এটা
উৎপাত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

🔹গণ উৎপাত ও ব্যক্তিগত উৎপাতের মধ্যে পার্থক্য (Distinction between a public
nuisance and a private nuisance) :

🔸 ব্যক্তিগত উৎপাত ব্যক্তিবিশেষের ক্ষতি করে কিন্তু গণ উৎপাত জনগণের সমষ্টিগতভাবে বা সাধারণভাবে ক্ষতি করে ।

🔹🔹 ব্যক্তিগত উৎপাত হচ্ছে টর্ট বা ব্যক্তিগত অপকার, কিন্তু গণ উৎপাত ফৌজদারি।
অপরাধ ও টর্ট দুইই হতে পারে ।

🔹 ব্যক্তিগত উৎপাত টর্ট বিধায় এর প্রতিকার ক্ষতিপূরণ, অপসারণ, নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি
হতে পারে, কিন্তু গণ উৎপাত টর্ট ছাড়াও ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে
পারে এবং এর জন্য শাস্তির ব্যবস্থা আছে।

🔹অপ্রতিহতভাবে দীর্ঘদিন ব্যক্তিগত উৎপাত হয়ে আসলে সেটা আইনসিদ্ধ হয়ে যায়।
গণ উৎপাত অনেক দিন যাবৎ হয়ে আসলেও তা’ আইন সিদ্ধ হয় না।

🔹 ব্যক্তিগত উৎপাতের জন্য অপকৃত ব্যক্তি টর্টের প্রতিকারের জন্য মামলা করতে
পারে কিন্তু গণ উৎপাতের জন্য ব্যক্তিবিশেষ টর্টের মামলা করতে পারে না। অবশ্য
সাধারণ জনগণের চেয়ে কোনাে ব্যক্তির বিশেষ ক্ষতি হয়ে থাকলে টর্টের মামলা
দায়ের করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *