🔸আইনের অনুশাসন :

🔹আইনের অনুশাসন বলতে আইনের বিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করা বুঝায়। শাসনকার্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনের প্রয়ােগ ও প্রাধান্যই আইনের অনুশাসনের বৈশিষ্ট্য। যে কোনাে ধরনের বৈষম্য বা ক্ষমতা প্রয়ােগে স্বেচ্ছাচারিতা নিরসনের জন্য আইনের অনুশাসনই একমাত্র উপযুক্ত পন্থা। ইহা একদিকে যেমন শাসকবর্গের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে, অন্যদিকে তেমিন নাগরিক অধিকারকে সংরক্ষণ ও সুনিশ্চিত করে।

🔸বস্তুত আইনের অনুশাসন এবং পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব এই দু’টি বৈশিষ্ট্যের জন্য আধুনিক বিশ্বে গ্রেট ব্রিটেন একটি আর্দশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।

🔹আইনেরঅনুশাসন সম্পর্কে ডাইসী (Dicey) যে তিনটি নীতির কথা উল্লেখ করেছেন তা হচ্ছে নিম্নরূপ :

🔸গণতান্ত্রিক বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠিত সুফল :

🔹 আইনের চোখে সকলেই সমান (Equality of all persons in the eye of law) :

➡️ইংল্যান্ডে আইনের চোখে সকলেই সমান। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। প্রত্যেক ব্যক্তিই পদমর্যাদা নির্বিশেষে সাধারণ আইনের অধীন।

➡️ প্রধানমন্ত্রী হতে আরম্ভ করে একজন সাধারণ
চৌকিদার পর্যন্ত প্রত্যেক নাগরিকই আইনসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে সকল কৃতকর্মের জন্য সমভাবে দায়ী থাকবেন। ডানবিস’ মামলায় প্রদত্ত রায় অনুযায়ী রাজার আদেশও (King’s command) কোনাে অবৈধ কাজের ওজর হিসেবে গ্রহণযােগ্য হবে না। এদেশের আইন প্রকৃত অর্থেই নিরপেক্ষ এবং সমভাবে প্রযােজ্য।

🔹সরকারি স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার অনুপস্থিতি (Absence of arbitrary power on the
part of the Government) : দেশের আইনের বিধান সুস্পষ্টভাবে ভঙ্গ না করলে এবং আদালত কর্তৃক বিচারে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনাে ব্যক্তিকে দৈহিক শাস্তি প্রদান কিংবা আর্থিক জরিমানা করা যাবে না। সুতরাং দেখা যায় যে, শাসনবিভাগ কাউকে ইচ্ছামতাে শাস্তি দিতে পারে না। যে সকল ক্ষেত্রে সরকারি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিগণ কাউকে জব্দ করার জন্য ব্যাপক স্বেচ্ছাচারী বা স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়ােগ করে থাকে, সে সকল ক্ষেত্রে এই নীতি মারাত্মক অস্ত্র হিসেবে ভারসাম্য রক্ষা করে।

🔹 শাসনতান্ত্রিক আইনের বিধানসমূহ দেশের সাধারণ আইনের ফলস্বরূপ (Rules of Constitutional Law are results of the ordinary law of the land):

➡️লিখিত শাসনতন্ত্রে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি স্বীকৃত হয়েছে। ইংল্যান্ডে এরূপ নির্দিষ্টভাবে মৌলিক অধিকার শাসনতান্ত্রিক আইন দ্বারা স্বীকৃত হয় নাই। ঐতিহাসিক বিবর্তনের সাথে সাথে ইংল্যান্ডের আদালতে জনগণের অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এরূপ প্রতিষ্ঠিত
অধিকারসমূহকে ভিত্তি করেই ইংল্যান্ডের সাংবিধানিক আইন গড়ে উঠেছে। জনগণের ব্যক্তিগত অধিকার সংরক্ষণের জন্য আদালতসমূহ যে রায় দিয়েছেন, তার উপর ভিত্তি করেই সাধারণ নীতিসমূহ উদ্ভূত হয়েছে। তাই বলা যায় যে, ইংল্যান্ডের সাধারণ আইনের বিধানসমূহ দেশের।

➡️সাধারণ আইনেরই ফলস্বরূপ। লিখিত মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে সরকারের ইচ্ছামতো তা আইনের সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িত থাকায় কোনাে বিপ্লবের মাধ্যমে তা হরণ করা সহজসাধ্য
স্থগিত রাখা বা বাতিল করার সুযােগ থাকে, কিন্তু ইংল্যান্ডে এই অধিকারগুলি দেশের সাধারণ
নয়।

🔹নিয়মভিত্তিক প্রতিষ্ঠিত সরকার। আইনানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত সরকারের সকল কার্যাবলি আইন দ্বারা
গণতান্ত্রিক বা সাংবিধানিক সরকার :

🔸গণতান্ত্রিক বা সাংবিধানিক সরকারের অর্থই হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত হয়। কাজেই স্বেচ্ছাচারিতার কোনাে স্থান সেখানে নেই এবং আইনের শাসন আপনাআপনি প্রতিষ্ঠিত হয়।

🔹তাই বলা হয় যে, গণতান্ত্রিক বা সাংবিধানিক সরকার একবার প্রতিষ্ঠিত হলে আইনের শাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ পর্যায়ক্রমে নির্গত হয়।ডাইসীর মতবাদের সমালােচনা আইনের অনুশাসন সম্পর্কে ডাইসী যে মতবাদ প্রদান করেছেন তা পরবর্তীকালে সমালােচিত হয়েছে। পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডের পরিস্থিতির অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে
যে ক্ষেত্রে এই মতবাদগুলি যথার্থ প্রমাণিত হয় নাই।

➡️প্রথমত, আইনের চোখে সকলেই সমান— এই নীতি বর্তমান যুগে পুরােপুরি সমর্থন করা যায় না। কারণ সমাজের সকল শ্রেণির লােকের দায়িত্ব বা পেশা ও কর্তব্য সমান নয়। কতিপয় নির্দিষ্ট শ্রেণির জন্য নির্ধারিত বিশেষ আইন সমাজের অবশিষ্টাংশকে প্রভাবিত করে না ।

🔹যেমন, যাজক, আইনজীবী, ডাক্তারী পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তির জন্য স্বতন্ত্র আইন রয়েছে।

⭕এছাড়া প্রশাসনিক বিচার ব্যবস্থার সৃষ্টির ফলে বিশেষ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সৃষ্টি হয়েছে, যা সাধারণ আইনের মূলনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হলেও বিচার বিভাগীয় বিষয়ের নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *