➡️১৯৩৯ সালের বিবাহ বিচ্ছেদ আইন পাসের প্রয়ােজনীয়তা ও উদ্দেশ্য :

🔸১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ-বিচ্ছেদ আইন প্রণয়নের প্রয়ােজনীয়তা ও উদ্দেশ্যে সে আইন পাসের জন্য আনীত বিলে বর্ণিত হয়েছে। বিয়ের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে যে, স্বামী ভরণপােষণ দানে অবহেলা করলে, স্ত্রীকে পরিত্যাগ করলে, প্রতিনিয়ত মারপিট বা দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে স্ত্রীর।

⭕জীবন দুর্বিসহ করে তুললে বা অনুরূপ কোনাে কারণ ঘটালেও স্ত্রী কর্তৃক বিবাহ বিচ্ছেদ চাওয়ার
কোনাে অধিকার হানাফি আইনে স্বীকৃত নেই। অথচ মালিকী আইন ব্যবস্থায় এ সম্পর্কে বিধান রয়েছে। এরূপ বিধান না থাকায় এ দেশের অসংখ্য মুসলিম মহিলা অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশার
শিকার হয়েছেন।

🔴হানাফি আইনে কোনাে বিশেষ ক্ষেত্রে কোনাে বিধান না থাকলে এবং প্রয়ােজন অনুভব করলে মালিকী বা হাম্বলী আইন প্রয়ােগ করা যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা করা হয় না।

🔹তাই দাম্পত্য ক্ষেত্রে অগণিত মুসলিম মহিলার দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য আইন প্রণয়ন প্রয়ােজন। এছাড়া বিবাহিতা মুসলিম নারীর স্বধর্ম ত্যাগের ক্ষেত্রে আইনের বিধান অস্পষ্ট থাকায় এ বিষয়েও সুস্পষ্টভাবে আইন প্রণয়নের প্রয়ােজন দেখা দেয়।

🔹১৯৩৯ সালের ১৭ই মার্চ বিবাহ-বিচ্ছেদ আইন পাস হয়, যা ১৯৩৯ সালের ৮ নং আইন নামে পরিচিত। এই আইনের মুখবন্ধে এর উদ্দেশ্য লিপিবদ্ধ আছে।

🔸 বলা হয়েছে যে, যেহেতু মুসলিম আইন মােতাবেক বিবাহিতা মহিলাগণ কর্তৃক বিবাহ-বিচ্ছেদের জন্য আনীত মামলা সম্পর্কে এবং বৈবাহিক সম্পর্কের উপর বিবাহিতা মুসলিম মহিলা কর্তৃক ইসলাম ধর্ম ত্যাগের পরিণামজনিত সন্দেহ দূরীকরণের জন্য মুসলিম আইনের বিধানসমূহ একত্রিত ও সুস্পষ্ট করা সমীচীন বলে আইনটি প্রণীত হয়েছে।

🔹কোন্ আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করা যায় :

🔸 বর্তমানে এ ধরনের মামলা পারিবারিক আদালতে দায়ের করতে হয়। ১৯৮৫ সালের পারিবারিক অধ্যাদেশ দ্বারা গঠিত পারিবারিক আদালতে এ ধরনের মামলা দায়ের করতে হবে।

➡️এই অধ্যাদেশের ৬নং ধারার বিধান অনুসারে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা সেই পারিবারিক আদালতে রুজ করতে হবে যার স্থানীয় এখতিয়ারের মধ্যে,

🔸নালিশের কারণটি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে উদ্ভূত হয়েছে।

অথবা,

🔸পক্ষগণ একত্রে বসবাস করেন বা সর্বশেষ একত্রে বসবাস করেছিলেন। তবে শর্ত হচ্ছে যে, বিবাহ-বিচ্ছেদ, দেনমােহর বা খােরপােশের মামলার যে আদালতের স্থানীয় এলাকার সীমারেখার মধ্যে স্ত্রী সাধারণত বসবাস করেন সে এলাকার আদালতের এখতিয়ার থাকবে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট জেলা আদালতেরও এখতিয়ার অক্ষুন্ন থাকবে।

🔴নিষ্ঠুরতা : স্বামী স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করলে স্ত্রী বিয়ে বিচ্ছেদের ডিক্রি পেতে পারেন।

➡️নিম্নোক্ত আচরণগুলি নিষ্ঠুর হিসেবে গণ্য হবে :

🔹স্বামী প্রতিনিয়ত স্ত্রীকে মারধাের করেন, অথবা এমন নিষ্ঠুর আচরণ করেন বা দৈহিক নির্যাতন না হয়েও স্ত্রীর জীবনকে অসহ্য করে তােলে।

🔹 স্বামী দুশ্চরিত্র নারীদের সাথে মেলামেশা করেন, অথবা কলঙ্কিত জীবনযাপন করেন।

🔹স্ত্রীকে নৈতিকতা বিরােধী জীবনযাপন করতে চেষ্টা করেন বা তাকে বাধ্য করেন।

🔹 স্ত্রীর সম্পত্তির অপচয় করেন, অথবা তাকে তার সম্পত্তির উপর আইনগত অধিকার।

🔹 প্রৱেগক কাপ প্রয়ােগ করতে বাধা প্রদান করেন।

🔹 স্ত্রীকে তার ধর্ম স্ত্রীকে তার ধর্ম চর্চা করতে বাধা প্রদান করেন।

🔹 একাধিক স্ত্রী থাকলে কোরআনের নির্দেশ অনুসারে ন্যায়পরায়ণতার সহিত সমান
ব্যবহার করেন না।

⭕নিজস্ব মতামত : হ্যা আমি মনে করি যে, ১৯৩৯ সালের আইনটি একজন অত্যাচারিত
মুসলিম মহিলার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *