➡️ কারাে সম্মতিক্রমে কোনাে কার্য সম্পাদিত হলে এবং এর ফলে কোনাে ক্ষতি হলে সম্মতিদানকারী কোনাে অভিযােগ করতে পারে না। এটা যে নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত তাকে
বলে ভলেন্টি নন্ ফিট ইনজুরিয়া। বাদী যে অধিকার স্বেচ্ছাপ্রণােদিতভাবে পরিত্যাগ করেছে সে অধিকার আর সে বলবৎ করতে পারে না।
🔸তাই মুষ্টিযুদ্ধে আহত হলে বা ডাক্তার অস্ত্রোপচার করলে টর্ট আইনে কাউকে দায়ী করা যায় না। ভলেনটি নন ফিট ইনজুরিয়া মতবাদ প্রয়ােগকালে প্রাথমিক স্তরে যে প্রশ্নটি উঠে তা হলাে সংশ্লিষ্ট কাজের ঝুঁকি সম্পর্কে বাদীর জানা ছিল কিনা এবং জ্ঞাতসারেই তার সম্মতি দিয়েছিল কিনা। কাজেই এ মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে হলে বাদীর অবগতি ও সম্মতি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।।
⭕অবগতি (Knowledge) : কোন্ কাজ কিরূপ ঝুঁকিপূর্ণ তা বাদীর সম্পূর্ণ জানা প্রয়ােজন।
কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ না এর আনুষঙ্গিক বিষয়গুলি ঝুঁকিপূর্ণ তা বাদীকে জানতে হবে। এছাড়া ঝুঁকির মাত্রা ও এর পরিণতি সম্পর্কে জানার জন্য বাদীকে পরিণত বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন হতে হবে।
🔸খুঁকিপূর্ণ কাজ বাদীর জানা থাকলেই চলবে না, বাদীর।স্বাধীন সম্মতিও প্রয়ােজন। স্মিথ বনাম বাকের মামলার ঘটনায় জানা যায় যে, বাদী একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়ােজিত ছিল কিন্তু প্রয়ােজনীয় মুহূর্তে বাদীকে সতর্ক করা হয় নাই।
হিসেবে গেলেও বলের আঘাত লাগতে পারে এটা সকলের জানা। কাজেই একটা বল হঠাৎ।
করে কারাে গায়ে এসে পড়লে তার জন্য কাউকে দায়ী করা যায় না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ।
দর্শককে বলের আঘাত করলে সেক্ষেত্রে বাদীর সম্মতি ধরা যায় না। যাহােক প্রাতটি ক্ষেত্রে।
পরিস্থিতির আলােকে বিচার করতে হবে।
➡️এছাড়া সম্মতি বাস্তব (real) ও স্বাধীন (free) হতে হবে। কোনাে নৈতিক ও আইনগত।
দায়িত্ব পালনে ঝুঁকি গ্রহণ করলে সেক্ষেত্রে বাদীর প্রকৃত সম্মতি ধরা যায় না।
➡️ তাই পথিমধ্যে এক ছােট মেয়েকে দুর্ঘটনা হতে রক্ষা করা নৈতিক কর্তব্য বিধায় কোনাে ব্যক্তি এরূপ কাজে প্রবৃত্ত হয়ে যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে এতে তার প্রকৃত সম্মতি ছিল বলা যায় না।
🔹অনুরূপভাবে
⭕কোনাে পুলিশ কনস্টেবল একটা দুরন্ত ঘােড়র কবল থেকে কোনাে মহিলা ও তার সন্তানকে
রক্ষা করার প্রচেষ্টায় আহত হলে তার কার্য স্বেচ্ছাপ্রণােদিত ও তার সম্মতি প্রকৃত তা বলা যায়
না।
⭕ স্বাধীন সম্মতি প্রদান সম্ভব যখন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি স্বাধীনভাবে চিন্তা ভাবনার সুযােগ পায় এবং তার উপরে কোনাে বাধ্যবাধকতা থাকে না। তাই অবৈধ প্রভাব, ভীতি প্রদর্শন বা
প্রতারণার মাধ্যমে সম্মতি আদায় করলে তা প্রকৃত সম্মতি হয় না।
🔸সীমাবদ্ধতাঃ
🔹 অবৈধ কাজ (Unlawful act) : কোনাে অবৈধ কাজ সম্মতি দ্বারা বৈধ করা যায় না,
অর্থাৎ অবৈধ কাজে সম্পতিদান প্রকৃত সম্মতি নয়।
🔹বিবাদীর অবহেলা (Negligence of the defendant) : বিবাদীর সতর্কতার দায়িত্ব থাকলে অবহেলার জন্য তাকে দায়ী হতে হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে বাদীর সম্মতি প্রকৃত ও গ্রহণযােগ্য নয়।
🔹 বিধিবদ্ধ আইন লঙ্ন (Breach of statutry duty) : বিধিবদ্ধ আইনের বিধান অনুযায়ী অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ভলেনটি নন্ ফিট ইনজুরিয়া মতবাদটি প্রযােজ্য হবে না।
🔹উদ্ধার কার্য (Rescue case) : উদ্ধার কার্যে অংশগ্রহণ করলে তা স্বেচ্ছাপ্রণােদিত হয়ে
ঝুঁকি গ্রহণ বলা যায় না। তাই নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব পালনে ঝুঁকি গ্রহণ করলে সেক্ষেত্রে বাদীর প্রকৃত সম্মতি ধরা যায় না।
🔹বিকল্প বিপদ পরিস্থিতি (Situation of alternative danger) : বিবাদীর কার্যের
ফলে ‘বিকল্প বিপদ’ এর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বাদী ক্ষণিকের চিন্তায় একটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করলেও তা স্বেচ্ছাপ্রণােদিত বলে চিহ্নিত করা যায় না।
➡️ভলেন্টি নন ফিট ইনজুরিয়া ও আংশিক অবহেলার পার্থক্য (Volenti non fit injuria
and Contributory Negligence) : ভলেন্টি নন ফিট ইনজুরিয়া বিবাদীর আত্মপক্ষ সমর্থনের
প্রকৃষ্ট উপায়।
➡️ বাদী স্বেচ্ছাপ্রণােদিত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ গ্রহণ করেছিল এরূপ প্রমাণিত হলে কতিপয় ব্যতিক্রম ছাড়া বিবাদী সম্পূর্ণ অব্যাহতি পাবে। অবহেলায় বাদীর অবদান প্রতিষ্ঠিত
হলে বিবাদী দায়িত্ব হতে আংশিক ভাবে মুক্ত হতে পারে।
🔸 ভলেন্টি নন ফিট ইনজুরিয়ার ক্ষেত্রে কোনাে সতর্কতা অবলম্বনের দায়িত্ব থাকে না, শুধু কাজটি কিরূপ ঝুঁকিপূর্ণ তা বিবেচনা করতে হবে। আংশিক অবহেলার ক্ষেত্রে বিবাদীর সাবধানতা অবলম্বনের দায়িত্ব ছিল বােঝা যায় এবং সে দায়িত্ব ভঙ্গের ফলেই বাদীর ক্ষতি হয়েছে এরূপ ইঙ্গিত দেয়।
➡️কিন্তু এক্ষেত্রে বাদীও
আংশিক দায়ী । ঝুঁকির মাত্রা ও প্রকৃতি সম্বন্ধে বাদীর অবগতি ও স্বেচ্ছায় সম্মতি প্রদান প্রমাণিত হলে ভলেন্টি নন ফিট ইনজুরিয়া প্রয়ােগ করা যাবে না। কোনাে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বাদীর জানা উচিত ছিল কিন্তু অসতর্কতার জন্য সে অবগত হতে পারে নাই—এরূপ প্রমাণিত হলে আংশিক অবহেলার নীতি প্রয়ােগ করা যাবে। যেক্ষেত্রে বাদীর সতর্কতা অবলম্বনের দায়িত্ব নেই সেক্ষেত্রে আংশিক অবহেলার নীতি প্রযােজ্য নয়। বাদী নিজের নিরাপত্তার প্রতি উদাসীন হলে অবদান অবহেলার জন্য দায়ী হবে কিন্তু নিজের নিরাপত্তার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করে থাকলেও ভলেন্টি নন ফিট ইনজুরিয়ার জন্য দায়ী হতে হয়।
➡️ইংল্যান্ডে ১৯৪৫ সালের Law Reform (Contributory Negligence) ইর্ড এর পূর্বে
ভলেন্টি নন ফিট ইনজুরিয়া, রেমােটনেস অব ড্যামেজ এবং কন্ট্রিবিউটরি নেগলিজেন্সি এর মধ্যে কোনাে পার্থক্য নিরূপিত হতাে না। কিন্তু এগুলির সবই আত্মপক্ষ সমর্থনে স্বতন্ত্র উপায় হিসেবে এখন বিবেচিত হচ্ছে।
🔹বাদীর সহিত সম্পর্কযুক্ত নয় এরূপ তৃতীয় ব্যক্তির অবদানে অবহেলা সংঘটিত হলে বাদীকে দায়ী করা যাবে না। এ ধরনের পরিস্থিতি ভলেন্ট নন ফিট ইনজুরিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় না। অবহেলায় নাবালকের অবদান সাধারণত আগ্রাহ্য হয়ে থাকে।
🔹এছাড়া বাদীর দৃশ্যত শারীরিক অক্ষমতা যা বাদী সহজেই জানতে পারে বা পারতাে বলে প্রতীয়মান হয় সেক্ষেত্রে বাদীর আংশিক অবহেলার যুক্তি অচল।
➡️কোনাে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সম্পর্কে সে যথাযথভাবে বুঝতে অক্ষম। কাজেই নাবালকের সম্মতি প্রকৃত সম্মতি বলা যায় না। তাই নাবালকের ক্ষেত্রেও ভলেন্টি নন ফিট ইনজুরিয়া নীতি প্রযােজ্য নয়।
🔹বিবাদীর কার্যের ফলে বিকল্প বিপদ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ভলেন্টি নন ফিট ইনজুরিয়া বা আংশিক অবহেলা—কোনাে নীতিই প্রযােজ্য নয়। এক্ষেত্রে বিবাদীকেই দাম্নিত্ব বহন করতে হবে।
🔹উদ্ধার কার্যে স্বাভাবিকভাবে বাদী প্রবৃত্ত হলে সেক্ষেত্রে এ নীতিগুলি প্রয়ােগ করা যায় না।