🔸 মেলিস বা বিদ্বেষ : বিদ্বেষ বলতে হিংসা বা ক্ষতি করার ইচ্ছাকে বুঝায় এবং সাধারণ অর্থে অসৎ মনােভাবকেই বিদ্বেষ বলা হয়। আইনের দৃষ্টিতে বিদ্বেষ দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
🔹প্রথমত, একটা অন্যায় কাজ যথার্থ কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে করা।
🔸দ্বিতীয়ত, এমন উদ্দেশ্যে কোনাে কাজ করা যা আইনে সমর্থনীয় নয়। বিদ্বেষ দুই রকমের
হতে পারে—বাস্তবে বিদ্বেষ (malice-in-fact) এবং আইনে বিদ্বেষ (malice-in-law)। বাস্তবে
বিদ্বেষকে প্রকাশ্য বা প্রকৃত বিদ্বেষ বলে এবং আইনে বিদ্বেষকে সুপ্ত বিদ্বেষ বলে।
🔸যথার্থ কারণ ছাড়া কোনাে অন্যায় কাজ করাই হচ্ছে আইনে বিদ্বেষ। আইনের বিদ্বেষ সর্বদা প্রতিকারযােগ্য।
🔸কিন্তু কতিপয় ক্ষেত্র ছাড়া প্রকৃত বিদ্বেষ প্রতিকারযােগ্য নয়। কেননা খারাপ মােটিভের জন্য একটা বিধিসম্মত কাজ অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। পক্ষান্তরে, একটা অন্যায় কাজ।করলে ভালাে ‘মােটিভ’ দিয়ে রেহাই পাওয়া যায় না।
⭕বাস্তবে বিদ্বেষ বা ঘটনাগত বিদ্বেষ ও আইনে বিদ্বেষ এর মধ্যে পার্থক্য:
(Distinction between malice in fact and malice in law)
▪️বাস্তবে বিদ্বেষ হচ্ছে অসৎ মনােভাব এবং আইনে বিদ্বেষ হচ্ছে হিংসামূলক অন্যায়
কাজ।
▪️বাস্তবে বিদ্বেষ হচ্ছে প্রকৃত বা ব্যক্ত বিদ্বেষ যা ঘটনার দ্বারা প্রমাণিত হয় আইনে বিদ্বেষ হচ্ছে অব্যক্ত, যা আইনের দ্বারা প্রমাণিত হয় বা আইনে অনুমিত হয়(presumed)।
যথার্থ কারণ ছাড়া কোনাে কাজ ইচ্ছাকৃত করা অথবা এমন এক উদ্দেশ্যে কোনাে কাজ করা যা আইনে সমর্থনীয় নয়—তা আইনের বিদ্বেষ ।
▪️ বাস্তবে বিদ্বেষ এর জন্য সাধারণত কোনাে প্রতিকার পাওয়া যায় না। তবে এর
ব্যতিক্রম আছে যে ক্ষেত্রে অসৎ মনােভাব প্রাসঙ্গিক। সেগুলি হলাে :
🔸বিদ্বেষ প্রসূত ফৌজদারি মামলা দায়ের ।
🔹মানহানি—যে ক্ষেত্রে সীমিত বিশেষ অধিকার অথবা নিরপেক্ষ মন্তব্য আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য উত্থাপন করা হয়।
🔹অনিষ্টকর মিথ্যা (Injurious falsehood)।
🔹ষড়যন্ত্র।
🔹উৎপাত—যদিও উৎপাতের জন্য বিদ্বেষ প্রয়ােজনীয় উপাদান নয় কিন্তু যেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যে হস্তক্ষেপের অভিযােগ আনা হয় সেক্ষেত্রে অসৎ মনােভাব উৎপাতকে প্রতিষ্ঠিত করে।
🔸পক্ষান্তরে, আইনে বিদ্বেষ সর্বদা প্রতিকারযােগ্য কারণ প্রতিটি অন্যায় কাজের মধ্যে আইনে বিদ্বেষ নিহিত থাকে। তবে যথার্থ কারণ থাকলে বা সাধারণ ব্যতিক্রমের অন্তর্ভুক্ত হলে কোনাে প্রতিকার পাওয়া যায় না।
➡️ঘটনায় বিদ্বেষ ও আইনে বিদ্বেষের মধ্যে পার্থক্য অনেক ক্ষেত্রেই বড় সূক্ষ্ম এবং ডাঃ নূরুল
ইসলামের মামলার সিদ্ধান্ত এদের মধ্যে পার্থক্যকে সূক্ষ্মতর করে দিয়েছে।
⚫আলােচ্য উক্তিটির ব্যাখ্যা : ‘মােটিভ’ বা মনােভাব হচ্ছে কোনাে কার্যসম্পাদনের প্রকৃত
উদ্দেশ্য এবং বিদ্বেষ বলতে হিংসা বা ক্ষতি করার ইচ্ছা বােঝায়।
⭕“মনােভাব’ শব্দটি বিদ্বেষ
শব্দের সাথে ক্রমান্বয়ে জড়িত হয়ে পড়েছে এবং সাধারণ অর্থে অসৎ মনােভাবকেই বিদ্বেষ বলা
হয়।
🟣আইনের দৃষ্টিতে বিদ্বেষ দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রথমত, একটা অন্যায় কাজ যথার্থ কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে করা, যেমন কারাে পুকুরে অযথা বিষ ছড়ানাে। দ্বিতীয়ত, এমন উদ্দেশ্যে কোন কাজ করা যা আইনে সমর্থনীয় নয়। বিদ্বেষ দুই রকমের হতে পারে—বাস্তবে বিদ্বেষ (malice in fact) ও আইনে বিদ্বেষ (malice in law)।
🔴বাস্তবে বিদ্বেষকে প্রকৃত বিদ্বেষ এবং
আইনে বিদ্বেষকে আইনের দৃষ্টিতে বিদ্বেষ বা সুপ্ত বিদ্বেষ বলা হয়।
🔸যথার্থ কারণ ছাড়া কোনাে অন্যায় কাজ করাই হলাে আইনের দৃষ্টিতে বিদ্বেষ।আইনসম্মত কাজ অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা তা যতই প্রকৃত বিদ্বেষমূলক হােক না কেন দূষণীয় নয়। একটা অন্যায় কাজ করলে ভালাে মােটিভ দিয়ে রেহাই পাওয়া যায় না।
🔹 পক্ষান্তরে, খারাপ মােটিভের জন্য একটা বিধিসম্মত কাজ অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। তাই কোনাে কাজ বিধিসম্মত কিনা অথবা কারাে আইনগত হস্তক্ষেপ করে কিনা সেটাই বিবেচ্য।
🔹কতিপয় বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া সাধারণত বিদ্বেষ বিচার্য নয়।
⭕ শিয়ারার বনাম শিল্ড[Shearer vs. Sheild(1914) A C 808] মামলার ঘটনায় প্রকাশদুইজন কনস্টেবল ওয়ারেন্ট ছাড়াই সন্দেহবশত একজনকে গ্রেপ্তার করে।
⭕ বিদ্বেষপ্রসূত মামলার প্রতিকারের দাবি করলে বিবাদীর কোনাে বিদ্বেষ ছিল না—নির্দোষ মানসিকতা নিয়ে কাজ করেছে বলে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়।
⭕ লর্ডস সভা রায় দেন যে, প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে.অবৈধভাবে কারাে ক্ষতি সাধন করলে নির্দোষ মনের অজুহাত অচল। দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে সকলে জ্ঞাত থাকার কথা।
➡️সেজন্য বিবাদীদেরকে আইনে বিদ্বেষ এর দায়ে দায়ী করা হয়। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্ট অভিমত প্রকাশ করেন যে, হাই কোর্ট বিভাগের রায় পরােক্ষভাবে অগ্রাহ্য করা আইনের দৃষ্টিতে বিদ্বেষ। [Per azle Munim J. in Dr Nurul
Islam vs Bangladesh represented by the Secretary, Ministry of Health and
Population Control and others, 33 D L. R. (A. D) (1981), P. 201].