➡️ অনধিকার প্রবেশ : ট্রেসপাশ বা অনধিকার প্রবেশ বলতে আইন দ্বারা নির্ধারিত।সীমারেখা অতিক্রম করাকে বুঝায় (Any transgression of law)। প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব।সম্পত্তি ভােগ-দখল করার এবং শরীর বা দেহ অস্পর্শ রাখার অধিকার রয়েছে। এ অধিকারে অহেতুক হস্তক্ষেপ করাকে ট্রেসপাশ বলে। হ্যালসবেরীর মতে, অন্যের সম্পত্তির দখলে বিঘ্ন।
🔹(Trespass is a wrongful act done in disturbance of the possession of property of another or against the person of another, against his will – Halsbury’s laws of England, 3rd Ed Vol. 38] প্রকৃত ক্ষতির প্রমাণ ব্যতিরেকেই ট্রেসপাশ প্রতিকারযােগ্য।
🔸বিভিন্ন প্রকার অনধিকার প্রবেশ :অনধিকার প্রবেশ তিন ধরনের হতে পারে—শরীর বা দেহে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ভূমিতে বা অনধিকার প্রবেশ।
🔹 ব্যক্তির উপর অনধিকার : ব্যক্তির উপর অনধিকার বলতে অনুমতি ব্যতিরেকে
প্রত্যক্ষভাবে শরীরে হস্তক্ষেপ বুঝায়। শরীরে অনধিকার হস্তক্ষেপ তিন প্রকারের হতে পারে।
এগুলি নিম্নরূপ :
🔹 আক্রমণ (Assault) : আঘাত করতে উদ্যত হলে মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবে একটা ভীতির সঞ্চার হয়। এরূপ উদ্যমকে আক্রমণ বলে।
🔹অবশ্য এই আঘাত করার ইচ্ছা ও ক্ষমতা আক্রমণকারীর থাকতে হবে। মুষ্ঠাঘাত করতে উদ্যত হওয়া, লাঠি মারতে এগিয়ে
আসা, বন্দুক উঁচানাে ইত্যাদি সবই আক্রমণ হিসেবে গণ্য হয়।
🔹আঘাত (Battery) : বিরুদ্ধ মনোেভাব নিয়ে রাগের বশবর্তী হয়ে আইনসঙ্গত কারণ
ছাড়া কারাে শরীরে বলপ্রয়ােগ করলে তাকে আঘাত বলে। বলপ্রয়ােগ বলতে সামান্য স্পর্শও
বুঝায়। অবশ্য কাজটি স্বেচ্ছাপ্রণােদিত হতে হবে।রাগান্বিত হয়ে কারাে কান ধরা, ইচ্ছার
বিরুদ্ধে মহিলাকে চুম্বন দেয়া, শরীরে পানি ছিটানাে, আলাে, তাপ বা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দেয়া, বসার।সময় চেয়ার সরানাের ফলে মেঝেতে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি সবই আঘাত হিসেবে ধরা হয়েছে।
কৃত্রিম অবরুদ্ধকরণ (False Imprisonment) : স্বল্প সময়ের জন্য হলেও বৈধ কারণ ব্যতীত যে কোনাে স্থানে কারাে ব্যক্তিগত চলাফেরার স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ রােধ করাকে কৃত্রিম অবরুদ্ধকরণ বলে।
🔸চলাফেরার স্বাধীনতা রােধ হয়েছে এটা সে সময়ে বাদীর জানার প্রয়ােজন নেই। তাই ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরে তালা লাগানাে এবং জেগে উঠার আগে তা খুলে দেয়া এই টর্টের শামিল। কোনাে বিশেষ দিকে যেতে বাধা দেয়া এই টর্টের আওতায় পড়ে না।
🔸কাউকে জোরপূর্বক কোথাও বসিয়ে রাখা, কোথাও যেতে বাধ্য করা, মেয়াদ অন্তে কয়েদীকে জেলে রাখা ইত্যাদি কৃত্রিম অবরুদ্ধকরণ টর্ট হিসেবে গণ্য হয়েছে।
🔹 জমির উপর অনধিকার : বৈধ কারণ ছাড়া অন্যের জমির দখলের উপর প্রত্যক্ষ
হস্তক্ষেপকে জমিতে অনধিকার প্রবেশ বলা হয়।
➡নিম্নবর্ণিত তিনটি পদ্ধতিতে এই টর্ট সংঘটিত হতে পারে।
🔸অবৈধ প্রবেশ : যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে অন্যের অঙ্গনে প্রবেশ করা ট্রেসপাশ। জানালায় হাত ঢুকানাে, দেয়ালে হেলান দেয়া, অনিচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলক্রমে প্রবেশ করা, এই
অপকর্মের অন্তর্ভুক্ত। ভূমির নিচে বা গৃহের উপরে প্রবেশ করাও অন্যায়। নিজে প্রবেশ না করে গবাদি পশু বা অন্য কিছু প্রবেশ করালেও এই টর্ট সংঘটিত হয়।
🔸 অবৈধ অবস্থান : বৈধ কারণ ব্যতীত অন্যের ভূমিতে প্রবেশ করা যেমন অন্যায়, বৈধ কারণে অন্যের ভূমিতে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট সময় অন্তে বা নির্দিষ্ট কার্যের পর অবস্থান করা অবৈধ। এরূপ অবৈধ অবস্থানের দ্বারা ভূমিতে ট্রেসপাশ সংঘটিত হয়।
🔸কোনাে বস্তু রাখা বা নিক্ষেপণ : যথার্থ কারণ ছাড়া অন্যের অঙ্গনে কোনাে বস্তু রাখলে বা নিক্ষেপ করলে ভূমিতে ট্রেসপাশ সংঘটিত হয়। তাই অন্যের দেয়ালে পেরেক ঢুকানাে, লতাগুল্ম লাগানাে, মই লাগানাে কিংবা দেয়াল ঠেকিয়ে আবর্জনা ফেলা ইত্যাদি সবই ট্রেসপাশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কিন্তু এ সকল কাজ প্রত্যক্ষ হতে হবে। কারাে অঙ্গনে ঢিল চুড়া প্রত্যক্ষ কাজ এবং তাই এটা ট্রেসপাশ। কিন্তু দেয়াল হতে কিছু ধসে অন্যের অঙ্গনে পড়লে তা পরােক্ষ এবং সেজন্য এটা ট্রেসপাশ নয় বরং এটা উৎপাত।
🔸 বস্তুর উপর অনধিকার প্রবেশ : কারাে দখলকৃত বস্তুতে অন্যায় হস্তক্ষেপ করলে বস্তুর
উপর অনধিকার প্রবেশ সংঘটিত হয়। যেমন—অন্যের ক্ষতিসাধন করার উদ্দেশ্যে তার গাড়ির চাকা খুলে নেয়া কিংবা কারাে গবাদি পশুর ক্ষতি করা ইত্যাদি।
🔹এই অপকার তিন পদ্ধতিতে সংঘটিত হতে পারে :
➡️আটক রাখা (By seizure) : কোনাে দ্রব্যের বস্তু কারাে দখলে থাকা অবস্থায় তা
আটক করলে বা নিজ দখলে নিলে বস্তুর উপর অধিকার প্রবেশ সংঘটিত হয়।
➡️অপসারণ দ্বারা (By removal) : কারাে দখলে থাকা অবস্থায় কোনাে বস্তু বা দ্রব্য
অন্যায়ভাবে অপসারণ করলে এই টর্ট সংঘটিত হয়।
প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিসাধান দ্বারা (By causing direct damage) : প্রত্যক্ষভাবে
বলপ্রয়ােগ দ্বারা বা শারীরিক স্পর্শ দ্বারা অন্যের দখলকৃত বস্তুর ক্ষতিসাধন করলে বস্তুর প্রতি অনধিকার প্রবেশ সংঘটিত হয়। অন্যের বাড়িতে ঢিল মেরে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে দেয়া এ
ধরনের অপরাধ।
🔹ট্রেসপাসের ফলে বাদীর অধিকার ক্ষুন্ন হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব সম্পত্তি ভােগদখল করার এবং শরীর বা দেহ অস্পর্শ রাখার অধিকার আছে। এই অধিকারের অহেতুক হস্তক্ষেপ করলে তা অনধিকার প্রবেশ বা Trespass-এর আওতায় আসবে। বাদীর সম্মতিতে বা
শরীরে কেহ অন্যায় হস্তক্ষেপ করলে তার অধিকার ক্ষুন্ন হয় এবং তিনি ট্রেসপাসের কারণ
দেখিয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়ে প্রতিকার চাইতে পারেন। ফলে দেখা যায় যে, ট্রেসপাসের
ফলে বাদীর শরীরে বা সম্পত্তির অধিকার ক্ষুন্ন হতে পারে ।
➡️ভূমিতে অনধিকার অনুপ্রবেশ :
🔹বৈধ কারণ ছাড়া অন্যের ভূমিতে প্রবেশ করলে বা তার দখলের উপর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ
করলে ভূমিতে অনধিকার প্রবেশ বলে অভিহিত করা যায়। তিনভাবে এইরূপ অনুপ্রবেশ ঘটে ।
🔸অবৈধ অনুপ্রবেশ : অবৈধভাবে কোন ভূমিতে প্রবেশ কররে, তথায় অবস্থান করলে,
তার থাকা গৃহে ঢুকলে বা জানালায় হাত ঢুকালে বা ভূমির নিচে ঢুকালে বা নিজে না ঢুকে
গবাদি পশু ঢুকালেও অবৈধ অনুপ্রবেশ হবে।
🔸অবৈধ অবস্থান : বৈধ কারণ ছাড়া অন্যের ভূমিতে প্রবেশ করা যেমন অন্যায় বৈধ কারণে অন্যের ভূমিতে প