🔸অধীনস্থ আইন প্রণয়ন : প্রফেসর স্যামন্ড দুই রকম আইন প্রণয়নের কথা উল্লেখ
নিয়ন্ত্রিত
করেছেন। এগুলি হচ্ছে-

➡️সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন এবং অধীনস্থ আইন প্রণয়ন।
ইংল্যান্ডের পাল্যামেন্টকে সে দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা বলে এবং
পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইন সর্বোচ্চ আইন, যা অন্য কোনাে কর্তৃপক্ষ বাতিল করতে পারে
না। পার্লামেন্টের ক্ষমতা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা হতে উদ্ভূত। আধুনিক জগতে পার্লামেন্টের
কাজের চাপ বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ এবং সেজন্য পার্লামেন্টের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারের
বিভিন্ন সংস্থাকে পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরূপে নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিধি, উপ-বিধি প্রণয়ন করার
ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এইভাবে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের অধস্তন কোনাে কর্তৃপক্ষ প্রণীত
আইনকে অধীনস্থ আইন প্রণয়ন বলে। আধুনিক জগতে অধীনস্থ আইন প্রণয়নের গুরুত্ব ক্রমশ
বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেননা পার্লামেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে বিশেষ করে ইংল্যান্ডে অসংখ্য অধীনস্থ
আইন প্রণয়ন করা হয়ে থাকে।

➡️সর্বোচ্চ ও অধীনস্থ আইন প্রণয়নের মধ্যে পার্থক্য :
প্রফেসর স্যামন্ড দুই রকম আইন প্রণয়নের কথা উল্লেখ করেছেন

🔹সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন (Supreme Legislation) এবং
অধীনস্থ আইন প্রণয়ন (Sub-ordinate Legislation or delegated Legislation)।
ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টকে সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা বলা হয়। পার্লামেন্ট কর্তৃক
প্রণীত আইন সর্বোচ্চ আইন এবং কোনাে আদালত বা কোনাে কর্তৃপক্ষই এটাকে বাতিল করতে
পারে না। পার্লামেন্টের ক্ষমতা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা হতে উদ্ভূত।

➡️সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের অধস্তন কোনাে কর্তৃপক্ষ প্রণীত কোনাে আইনকে অধীনস্থ আইন
প্রণয়ন বলা হয়। এরূপ আইন সাবভৌম প্রণীত আইন দ্বারা রহিত করা যেতে পারে এবং দুই
ধরনের আইনের মধ্যে কোনাে বিরােধ দেখা দিলে সার্বভৌম প্রণীত আইন অবশ্যই বহাল
থাকবে। ইংল্যান্ডের আইন ব্যবস্থায় প্রধানত ৫ ধরনের অধীনস্থ আইন পরিলক্ষিত হয়, যথা—
🔹ঔপনিবেশিক (Colonial),

🔹নির্বাহী (Executive),

🔹বিচার বিভাগীয় (Judicial),

🔹মিউনিসিপ্যাল (Municipal) এবং

🔹 স্বায়ত্তশাসিত (Autonomous)।

➡️পার্লামেন্টের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরূপে নিজ
নিজ ক্ষেত্রে বিধি, উপ-বিধি প্রণয়ন করে থাকে।
অধীনস্থ আইন বিকাশের কারণ : কালের বিবর্তনে রাষ্ট্র সম্পর্কে ধারণা এবং রাষ্ট্রের
কাজের পরিধি অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। প্রাচীনকালের ধারণা পুলিশি রাষ্ট্র এখন আর নেই।

➡️এখন কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে রাষ্ট্রের কার্যাবলি বহুলাংশে বিস্তৃত হয়েছে। সেই উদ্দেশ্য
সাধনের জন্য রাষ্ট্রের আইনসভাকে এখন অনেক আইন প্রণয়ন করতে হয়। সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিও ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে এবং আইন পাশের উদ্দেশ্যে বিল
উত্থাপন করলে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে এত বিপুল সংখ্যক আইন
প্রণয়ন কোনাে দেশের পার্লামেন্টের পক্ষেই সম্ভবপর নয়। এছাড়া অনেক জটিল ও কারিগরী
বিষয়ে আইন প্রণয়নের প্রয়ােজন হয়, যা পার্লামেন্টের সদস্যদের পক্ষে বুঝা সম্ভব হয় না।
এজন্য বিশেষজ্ঞের প্রয়ােজন। উদাহরণস্বরূপ, বিমান চালনা, সমুদ্রে জাহাজ চালনা, খনিজ
সম্পদ উত্তোলন, চিকিৎসা পেশা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ে আইন প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের
জড়িত করা প্রয়ােজন। এতেও অনেক কালক্ষেপণ হয় এবং সমস্যার সৃষ্টি হয়

➡️পার্লামেন্ট শুধু মূল কাঠামাে প্রস্তুত করে দিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে বিস্তারিত বিধিমালা প্রস্তুত করার
জন্য ক্ষমতা অর্পণ করেন। সকল দেশেই পার্লামেন্ট হচ্ছে আইন প্রণয়নের একমাত্র সংস্থা কিন্তু
বাস্তব সমস্যার কারণে পার্লামেন্ট কর্তৃক অর্পিত ক্ষমতাবলে বিভিন্ন সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক
অধীনস্থ আইন প্রণয়ন করে থাকে।

➡️কাজেই দেখা যায় যে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আইনকে যুগােপযােগী করতে হয়
এবং সেজন্য বিভিন্ন প্রকৃতির আইন প্রণয়নের প্রয়ােজন, যা একা পার্লামেন্টের পক্ষে সম্ভবপর
হয়ে উঠে না। তাই অধীনস্থ আইন ব্যবস্থা বিকাশ লাভ করেছে এবং এর বিকাশ লাভের মূল
কারণসমূহ নিম্নরূপ :
(১) সংসদের কাজের চাপ ও সময়ের স্বল্পতা;
(২) বিষয়বস্তুর বৈশিষ্ট্যতা;
(৩) আইন নমনীয় করার প্রয়ােজনীয়তা ও
(৪) দেশের জরুরি অ বস্থার প্রয়ােজনে।

🔹অধীনস্থ আইন নিয়ন্ত্রণ :

➡️সংসদ : যেহেতু পার্লামেন্ট বা সংসদ আইনের মূল কাঠামাে প্রস্তুত করে দেয়,
অধীনস্থ আইন সেই কাঠামাের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। খসড়া বিল সংশ্লিষ্ট সংস্থা তৈরি
করলেও তার সংশােধন, পরিবর্তন ও অনুমােদন দিয়ে থাকে সংসদ। এছড়া সংসদই অধীনস্থ
আইনগুলি তদারকি করে থাকে।
➡️ বিচারিক নিয়ন্ত্রণ : সংসদ প্রত্যক্ষভাবে অধীনস্থ আইনসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকলেও
পরােক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে আদালত। সংসদ কর্তৃক অনুমােদিত মূল কাঠামাের মধ্যে না
হলে বা এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে আদালত তা আল্টা ভাইরাস ঘােষণা করতে পারে।

➡️কোনাে বিশেষ পরিস্থিতিতে অধীনস্থ আইন অপ্রযােজ্য ঘােষণা করতে পারে। এছাড়া সরকারি
কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার কার্যাবলি ও পদ্ধতির উপর রিট, নিষেধাজ্ঞা বা ঘােষণা দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে
নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
🔹নির্ভরযােগ্য সংস্থা : একমাত্র নির্ভরযােগ্য সংস্থা (Trustwarthy body) অধীনস্থ আইন
প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করে আভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ আরােপ করা হয়। কাজেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে
নির্ভরযােগ্যতা বা বিশ্বাসযােগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়।
🔹 জনমত ; গণমাধ্যমের দ্বারা জনমত প্রতিফলিত হয়। জনগণের আলােচনা-
সমালােচনার দ্বারাও অধীনস্থ আইন নিয়ন্ত্রিত বা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

➡️(ঙ) বিশেষজ্ঞ মতামত ; কারিগরী প্রকৃতি বা বিশেষ ধরনের সংস্থার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের
মতামত গ্রহণ করা হয়। এতেও অধীনস্থ আইনগুলি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *